Friday, November 24, 2017

কুরআন এর ১৭ তম সূরা বনি-ইসরাইল ৩২-৩৩

কুরআন এর ১৭ তম সূরা বনি-ইসরাইল ৩২-৩৩

এই আয়াতটি কুরআনের সেই অংশ যেটি মহানবী (সঃ) এর ১০টি বিখ্যাত আদেশের শামিল। কিছু কিছু সাহাবিগণ বলেছেন এটি মুসা (আঃ)এর মূল নীতি গুলোর মধ্যে একটি। আবার মজার বিষয় হচ্ছে এ সূরার নাম “বনি-ইসরাইল” ইসরাইল এর সন্তানগণ।

এই বিশেষ আয়াতে আল্লাহ বলছেন তোমরা জিনা বা ব্যবিচার এর নিকটবর্তী হয়ো না এবং এর ধারের কাছেও যেয়ো না।

অন্য ভাবে বলা যায় এটা একটা কাজ এবং অনেক গুলো ছোট ছোট আচরণ যে, গুলো কাজটির দিকে নিয়ে যায়। কাজটির একটি পরিধি আছে যা চারপাশে ঘুরতে থাকে এবং আপনি কাজটির ধারের কাছেও যেতে পারবেন না।

কিছু কাজ আছে যা করা হারাম নয়।আপনি আঙ্গুল উঠিয়ে বলতে পারবেন না যে, এই কাজগুলো করা ভুল। কিন্তু যখন আপনি এই কাজে যুক্ত হয়ে যাবেন তখন আপনি মহাকর্ষের টান অনুভব করবেন যে,আস্তে, আস্তে; একটু, একটু করে আপনাকে অবশেষে হারাম কাজের দিকে নিয়ে যাবে এবং সর্বশেষে কাজটি আপনাকে দিয়ে করাবে।

আমরা শয়তানের বিষয়ে একটা জিনিস জানি যে,…
আমি লক্ষ করেছি যে, শয়তান অত্যন্ত দূরোদরশিতা সম্পুর্ন।সে একবারে আপনাকে ধরবে না।সে আপনার কাছে আসবে, এবং আস্তে,আস্তে; একটু..! একটু..! একটু করে আপনার পথ ভ্রষ্ট করবে। যতক্ষন না পর্যন্ত আপনার চরিত্র নষ্ট না করতে পারে।শয়তান আপনার কাছে একবার এসেই খারাপ কিছু করাতে পারে না।

আপনারা জানেন আদম (আঃ) এবং হাওয়া(আঃ) এর গল্পেও শয়তান কি ভাবে ২জন কে জান্নাত থেকে বের করেন।

যে ভাবে অগ্রসর হয়েছিল সূরাতুল “আরাফে” এটি বলা হয়েছে। শয়তান অবিরাম ভাবে একবারই করেনি…ধরুন শয়তান আসলো এবং বলল, হেই..! দেখ গাছটি কি চমৎকার তাই না..? এর পর সে চলে গেল। সে এমনটা করে নাই। সে চরম ভাবে নিরন্তর ছিলো। সে একটু একটু করে পথ ভ্রষ্ট করেছিল এবং তাদের মনের মধ্যে এমন এক ধারনা গেঁথে দিয়েছিল যে, যতক্ষন না তারা মনে করছিল এটা তাদের অভিপ্রায়।

একই সূরাতে আল্লাহ বলছেন “ইন্না ইবাদি লাইসালাকা-আলাইহিম সুলতানা” আমার বান্দাদের উপর শয়তানের কোন কর্তৃত্বই থাকে না।

অন্য ভাবে বলা যায়… যে সকল মানুষ সত্যিকার ভাবে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে তাদের উপর শয়তানের কোনই কতৃত্ব থাকে না।
শয়তানের কথা শুনতে শুরু করলে…. শয়তান আপনাকে আদেশ করবে অশ্লীল, বেহাইয়াপনা কাজ করার জন্য। অন্য ভাবে বলা যায়,
শয়তানের কথা আপনি একটু শুনবেন;
আপনি তাকে একটু শক্তি দিচ্ছেন;
আপনি তার কথা আর একটু ভালো ভাবে শুনবেন তো;
আপনি আর একটু বেশি শক্তি দিবেন।
আর আপনি যখন তার কথা অবিরাম ভাবে শুনতেই থাকবেন। এক সময় সে আপনাকে আদেশ করবে, আপনি নিজেকে এমন ভাবে বলবেন: আমি আমার নিজেকে সাহায্য করতে পারছি না।আমি এটা জানিও না, প্রতি রাতে এটা কিভাবে হয়ে যায়।কেন আমি এগুলা করি।আতঙ্ক ওই সব ওয়েব সাইট গুলো ব্রাউজ বা লগিং করি কেনো…? আপনি যখন লিফটে বা রাস্তাই হেঁটে যান কেনো নিজের চোখ নিচে নামিয়ে রাখতে পারেন না..? আমি নিজেকে সাহায্য করতে পারছি না.. আমি জানি না আমার কি করা উচিৎ?আর আপনি জানেন শয়তান আপনাকে শক্ত ভাবে আকরে ধরে।বদ অভ্যাস যুক্ত চক্রের মধ্যে আপনাকে টেনে নিয়ে যায়।
এটা আস্তে আস্তে খারাপ, আরো খারাপ, আরো খারাপ, আরো অধিকতর খারাপের দিকে টেনে নিয়ে যাবে।

আপনি যদি এটা শিকার না করেন তাহলে, অধিকতর খারাপের দিকে নিয়ে যায়….. আর এটা আপনার আত্মাকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ক নির্ভর করে, আপনার অন্তর কতোটা পরিষ্কার তার উপর।

যতবার আপনি অশ্লীল, বেহাইয়াপনাই উদ্ভাসিত হন…. আপনার অন্তর এর উপর আরো ময়লা, আরো অন্ধকার, আরো আবরণ ঢালতেই থাকে এবং ঢালতেই থাকে যতক্ষন না পর্যন্ত আপনি আল্লাহর কথা শুনবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার চোখ দিয়ে এক ফোটাও পানি আসবে না।কারণ আপনার অন্তর এতোটাই কঠিনে পরিনিত হয়েছে যে, যত অনাবৃত জিনিস দেখেছেন, যত পাপ করেছেন চোখ দিয়ে সব সময়। আর আপনি এর কোন গুরুত্বও দিচ্ছেন না।
একটা সুন্দর হৃদয় যন্ত্রনা গ্রস্থ হয়, যখন অস-মাচিন কিছু একটা দেখে; যা, আল্লাহর নির্দেশের শামিল নয়। এটা আকর্ষিত হয় না বরং যন্ত্রনা গ্রস্থ হয়।

∙◌ সূরার মূল বক্তব্য ফিরে আসি…
“ওয়ালা-তাকরাবুঝ ঝিনাইন্নাহূকা-না ফা-হিশাতাওঁ ওয়া ছাআ ছাবীলা”
আর তোমরা ব্যবিচার এর কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পখ।

আল্লাহ এটাকে একটা পথ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, ভয়ংকর পথ।
পথে পদক্ষেপ থাকে ঠিক? পথে মানেই পদক্ষেপ। আপনাকে শনাক্ত করতে হবে আপনি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন?আমরা জানি প্রত্যেকটা কাজের একটি প্রক্রিয়া থাকে। কিছু চক্র থাকে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, অফিস-আদালত ইত্যাদি…..শেষে কয়েক ঘন্টা সময় থাকে আপনার হাতে……. আপনারা জানেন আপনার কিছু বন্ধুও আছে, যাদের সাথে ঘুরছেন, কিন্তু তাদের কোন মান নাই।প্রত্যেকটা সময় আপনাকে শনাক্ত করতে হবে যে, কোন কাজগুলো পাপের দিকে টেনে নিয়ে যায়।

∙◌ এই আয়াত এর পরে আল্লাহ বলছেন….
“ওয়ালা-তাকতুলুন্নাফছাল্লাতী হাররামাল্লা-হু ইল্লা-বিল হাক্কি”
তোমরা মানুষ হত্যা করো না।

আল্লাহ জিনাকে প্রথম অপরাধ বলে উল্লেখ করেছেন এবং হত্যাকে দ্বিতীয় অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আপনি কী চিন্তা করতে পারছেন?
আপনি হয়তো ভাবছেন হত্যা অনেক বড় অপরাধ….
কিন্তু আল্লাহ বলছেন অন্য মানুষের মর্যাদা লঙ্ঘন করবেন এটি হচ্ছে “ফাহাসা” আপনি যখন মানুষকে নিয়ে এভাবে চিন্তা করবেন, তখন আপনি নিজের এবং তার মর্যাদা লঙ্ঘন করবেন।

আমরা যদি কাউকে হত্যা করি, তাহলে আমরা তাকে শারীরিক ভাবে হত্যা করি।তার বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্গন করি।

আর ওটা হচ্ছে আত্মার হত্যা “ফাহাসা”
আর এটি হচ্ছে শারীরিক হত্যা “ফাতর”
তাই আল্লাহ তালা “আত্মার” হত্যার কথা প্রথমে বলেছেন।

আমাদের সবার মন এতো নিচে নেমে গিয়েছে যে, একটা নতুন সিনেমা মুক্তি পেলেই আপনি হয়তো অনেক গুলো টেইলোর দেখে ফেলেছেন। আবার নিজেকে বলছেন “আহ্” এখানে একটা মাত্র খারাপ দৃশ্য আছে… ব্যাপার না।এটা একটা PG-13.। যেটা আগে PG-13. হওয়ার কথা ছিলো এখন সেটা PG কাজেই সব জায়গায় অশ্লীল দৃশ্য। এবং আমরা আত্মার মূল্য হারিয়ে ফেলেছি। আত্মার প্রতি আমাদের যত্নবান হওয়া উচিত।


চোখ দিয়ে তাকানো, চোখের জিনা থেকে বাকি সব শুরু হয়।অন্য সব কিছু এখান থেকে শুরু।
এটা আমাদের নামাজ, দোয়া, চরিত্র, পরিবার এবং পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলছে। এবং আমরা কোন গুরুত্বও দিচ্ছি না।
আমরা মনে করি এটাই জীবন, আমাদেরকে সময় এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এটা মর্ডান যুগ… তাই ভাবছেন আপনি..? শুধু মনে রাখুন যে, পৃথিবীর মায়া ছাড়িযে কবরে যেতেই হবে। আর কবর যা ছিলো তাই আছে এবং কিয়ামতের আগ পর্যন্ত তাই থাকবে।

পরিশেষে, ছোট মানুষ হয়ে একটা কথা বলিঃ- নিজের মর্যাদা নিজেই রাখুন, নিজের পরিবারে মর্যাদা বজায় রাখুন এবং নিজে নাফ্সকে নিয়ন্ত্র করুন।

যে সংবেদনশীলতা নিয়ে কুরআন এর ভাষা আল্লাহ তালা ব্যবহার করেছেন, আমাদেরকে সেই ভাষা বুঝতে হবে। যাতে করে আমরা আল্লাহর বিজ্ঞতার তারিফ করতে পাড়ি। এবং বুঝতে পাড়ি কিভাবে তিনি আমাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন।

বিঃদ্রঃ ভুল- ত্রুটি  থাকলে সংশোধন করে দিবেন।  আরো অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু বিষয় বলার ছিলো, কিন্তু বলা হলো না। আর কোনো কিছু লিখে বুঝাতে গেলে অনেক বড় হয়ে যায়।

3 comments: