Wednesday, January 2, 2019

বিশুদ্ধ আক্বিদা (২য় পর্ব)

❒ বিশুদ্ধ আক্বিদা (২য় পর্ব)
----------------------------------------------
ইসলামী শরী‘আত দুই ভাগে বিভক্ত। যথাঃ
(১) আক্বীদা বা বিশ্বাসগত : অর্থাৎ ঈমানের ছয়টি বিষয়ের উপর সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা এবং একমাত্র তারই ইবাদতে বিশ্বাস করা। আর ইহাই ইসলামের মৌলিক বিষয়।
(২) আমলগত : অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদত করার
যাবতীয় পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং তদনুযায়ী আমল করা।
অতএব আক্বীদাই ইসলামের মৌলিক বিষয়; যার শুদ্ধতার উপর আমল নির্ভরশীল। যেমন –

✍ মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

ﻓَﻤَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺮْﺟُﻮْ ﻟِﻘَﺎﺀَ ﺭَﺑِّﻪِ
ﻓَﻠْﻴَﻌْﻤَﻞْ ﻋَﻤَﻠًﺎ ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﻌِﺒَﺎﺩَﺓِ ﺭَﺑِّﻪِ ﺃَﺣَﺪًﺍ -
‘যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’ (কাহফ ১৮/১১০) ।

✍ তিনি অন্যত্র বলেনঃ

ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺃُﻭْﺣِﻲَ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻭَﺇِﻟَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻠِﻚَ ﻟَﺌِﻦْ ﺃَﺷْﺮَﻛْﺖَ ﻟَﻴَﺤْﺒَﻄَﻦَّ
ﻋَﻤَﻠُﻚَ ﻭَﻟَﺘَﻜُﻮْﻧَﻦَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﺎﺳِﺮِﻳْﻦَ -
‘তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই অহী হয়েছে যে, তুমি যদি আল্লাহর সাথে কোন শরীক স্থির
কর, তবে তোমার আমল বরবাদ হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (যুমার ৩৯/৬৫) ।

✍ তিনি আরও বলেনঃ

ﻭَﻟَﻮْ ﺃَﺷْﺮَﻛُﻮْﺍ ﻟَﺤَﺒِﻂَ ﻋَﻨْﻬُﻢْ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮْﺍ ﻳَﻌْﻤَﻠُﻮْﻥَ
‘যদি তারা শিরক করত তবে তাদের আমল বরবাদ হয়ে যেত’ (আন‘আম ৬/৮৮) ।
উল্লিখিত আয়াত সমূহ থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, শিরক মুক্ত বিশুদ্ধ আক্বীদা ব্যতীত আল্লাহর নিকটে কোন আমল কবুল হবে না। অতএব আমল করার পূর্বে আক্বীদা সংশোধন করা অপরিহার্য।

❒ মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তির মূলেই রয়েছে আক্বীদাগত পার্থক্যঃ
আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির সার্বিক জীবন পরিচালনার যাবতীয় বিধি-বিধান নাযিল করে একমাত্র
তারই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আর তা অনুসরণের ক্ষেত্রে পরস্পরে দলাদলী বা বিচ্ছিন্ন হ’তে নিষেধ করেছেন। আর এই নির্দেশ আক্বীদাগত ঐক্যের নির্দেশ। এই নির্দেশ পালনের মাধ্যমে মানুষ মুসলিম হয় এবং পরকালে জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে প্ররিত্রাণ লাভ করে ও জান্নাতের অফুরন্ত নে‘আমত লাভের পথ সুগম করে। পক্ষান্তরে উক্ত নিষেধ অমান্য করে ভ্রান্ত আক্বীদায় বিশ্বাসী হওয়ার মাধ্যমে মানুষ ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, রাফেযী, খারেজী, শী‘আ, মু‘তাযিলা বিভিন্ন ভ্রান্ত দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে জান্নাতের অফুরন্ত নে‘মত থেকে বঞ্চিত হয় এবং জাহান্নামের কঠিন আযাব গ্রহণের পথ সুগম করে। আমরা যারা নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করি, একই কা‘বার দিকে মুখ ফিরিয়ে ছালাত আদায় করি, তারাও আজ শতধাবিভক্ত। নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করেও ‘ওয়াহদাতুল উজূদ’-এর মত ভ্রান্ত আক্বীদায় বিশ্বাসী হওয়ার মাধ্যমে নিজেরাই আল্লাহ বনে যাই; নাউযুবিল্লাহ।

কেউবা মুহাম্মাদ (সঃ)- কে আল্লাহ বলি, আবার কেউ আলী (রাঃ)- কে আল্লাহ বলি। এ সমস্ত ভ্রান্ত আক্বীদা তাদের মৌখিক স্বীকৃতির অসারতা প্রমাণ করে। তদানীন্তনকালের কাফির মুশরিকরা তাওহীদে রুবূবিয়্যাত তথা আল্লাহকে একক সৃষ্টিকর্তা হিসাবে বিশ্বাস করলেও ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে একক
বলে বিশ্বাস করেনি। তারা মূর্তিপূজার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের চেষ্টা করত। অনুরূপভাবে অধিকাংশ মুসলিম তাওহীদে রবূবিয়্যাতকে বিশ্বাস করলেও
তাওহীদে ইবাদত ও আসমা ওয়াছ ছিফাতকে পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে পারেনি। কবর পূজা ও পীরপূজার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করতে চায়। আর এই আক্বীদাগত বিভক্তির কারণেই মুসলমানরা (উম্মতে মুহাম্মাদী) ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, যার মধ্যে একটি মাত্র
দল জান্নাতে প্রবেশ করবে।

✍ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেনঃ

ﻟَﻴَﺄْﺗِﻴَﻦَّ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻣَّﺘِﻲْ ﻣَﺎ ﺃَﺗَﻰ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻨِﻲْ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴْﻞَ ﺣَﺬْﻭَ ﺍﻟﻨَّﻌْﻞِ ﺑِﺎﻟﻨَّﻌْﻞِ
ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻣَﻦْ ﺃَﺗَﻰ ﺃُﻣَّﻪُ ﻋَﻼَﻧِﻴَﺔً ﻟَﻜَﺎﻥَ ﻓِﻲْ ﺃُﻣَّﺘِﻲْ ﻣَﻦْ
ﻳَﺼْﻨَﻊُ ﺫَﻟِﻚَ ﻭَﺇِﻥَّ ﺑَﻨِﻲْ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴْﻞَ ﺗَﻔَﺮَّﻗَﺖْ ﻋَﻠَﻰ ﺛِﻨْﺘَﻴْﻦِ ﻭَﺳَﺒْﻌِﻴْﻦَ ﻣِﻠَّﺔً
ﻭَﺗَﻔْﺘَﺮِﻕُ ﺃُﻣَّﺘِﻲْ ﻋَﻠَﻰ ﺛَﻼَﺙٍ ﻭَﺳَﺒْﻌِﻴْﻦَ ﻣِﻠَّﺔً ﻛُﻠُّﻬُﻢْ ﻓِﻲْ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﺇِﻻَّ ﻣِﻠَّﺔً
ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ ﻭَﻣَﻦْ ﻫِﻰَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﻣَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﺃَﺻْﺤَﺎﺑِﻲْ -
‘বানী ইসরাঈলের উপর যেমন অবস্থার আগমন
ঘটেছিল আমার উম্মতের উপরেও তেমন অবস্থার আগমন ঘটবে; এক জোড়া জুতা পরস্পর সমান হওয়ার ন্যায়। এমনকি যদি বানী ইসরাঈলদের মধ্যে এমন লোক থাকে, যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছিল, তাহ’লে আমার উম্মতের মধ্যেও এমন লোক পাওয়া যাবে যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। বানী ইসরাঈলরা বিভক্ত হয়েছিল ৭২টি দলে; আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩টি দলে। সব দলই জাহান্নামে প্রবেশ করবে, একটি দল ব্যতীত। ছাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)!
সে দল কোনটি? তিনি বললেন, আমি এবং আমার অনুসারীগণ যার উপরে প্রতিষ্ঠিত রয়েছি, এর উপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে (তারাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল)।

অতএব বিশুদ্ধ আক্বীদাই ইহকালে মুসলমানদের
পরস্পরের মধ্যে ঐক্যের একমাত্র পথ এবং পরকালে মুক্তির একমাত্র উপায়। একে অপরের আক্বীদা সংশোধনের মাধ্যমেই মুসলিম ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। নবী-রাসূলগণের সকলেই সর্বপ্রথম মানুষের
আক্বীদা সংশোধনের দাওয়াত দিয়েছেন। আক্বীদা সংশোধনের পরেই কেবল তাকে ছালাত, ছিয়াম সহ ইসলামের অন্যান্য বিধান মানার নির্দেশ দিয়েছেন।

✍ রাসূলুল্লাহ (সঃ) মু‘আয (রাঃ)- কে ইয়ামানে প্রেরণকালে বলেছিলেনঃ

ﺍﺩْﻋُﻬُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺷَﻬَﺎﺩَﺓِ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ، ﻭَﺃَﻧِّﻲْ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻓَﺈِﻥْ ﻫُﻢْ
ﺃَﻃَﺎﻋُﻮْﺍ ﻟِﺬَﻟِﻚَ ﻓَﺄَﻋْﻠِﻤْﻬُﻢْ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻗَﺪِ ﺍﻓْﺘَﺮَﺽَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺧَﻤْﺲَ ﺻَﻠَﻮَﺍﺕٍ
ﻓِﻲْ ﻛُﻞِّ ﻳَﻮْﻡٍ ﻭَﻟَﻴْﻠَﺔٍ، ﻓَﺈِﻥْ ﻫُﻢْ ﺃَﻃَﺎﻋُﻮْﺍ ﻟِﺬَﻟِﻚَ ﻓَﺄَﻋْﻠِﻤْﻬُﻢْ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ
ﺍﻓْﺘَﺮَﺽَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺻَﺪَﻗَﺔً ﻓِﻲْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟِﻬِﻢْ، ﺗُﺆْﺧَﺬُ ﻣِﻦْ ﺃَﻏْﻨِﻴَﺎﺋِﻬِﻢْ ﻭَﺗُﺮَﺩُّ
ﻋَﻠَﻰ ﻓُﻘَﺮَﺍﺋِﻬِﻢْ -
‘সেখানকার অধিবাসীদেরকে এ সাক্ষ্য দানের প্রতি আহবান জানাবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। যদি তারা তা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত কর যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যদি সেটাও তারা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত কর যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর তাদের সম্পদে ছাদাক্বাহ (যাকাত) ফরয করেছেন। যেটা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হবে আর দরিদ্রের মাঝে বণ্টন করা হবে’।

আলোচ্য হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে, সর্বপ্রথম মানুষের আক্বীদা সংশোধনের দাওয়াত দিতে হবে। কেননা আক্বীদাই হ’ল ইসলামের মৌলিক বিষয়। আক্বীদা সংশোধনের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশের
পরেই ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত সহ ইসলামের যাবতীয় বিধান মেনে চলতে হবে। অন্যথা তার ইবাদত আল্লাহর নিকট কবুল হবে না।

✍ মহান আল্লাহ বলেনঃ

ﻭَﻗَﺪِﻣْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﺎ ﻋَﻤِﻠُﻮْﺍ ﻣِﻦْ ﻋَﻤَﻞٍ ﻓَﺠَﻌَﻠْﻨَﺎﻩُ ﻫَﺒَﺎﺀً ﻣَﻨْﺜُﻮْﺭًﺍ -
‘আমি তাদের (কাফিরদের) কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করব, অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করব’
(ফুরক্বান ২৫/২৩) ।

✍ অন্যত্র তিনি বলেনঃ

ﻭَﻣَﺎ ﻣَﻨَﻌَﻬُﻢْ
ﺃَﻥْ ﺗُﻘْﺒَﻞَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻧَﻔَﻘَﺎﺗُﻬُﻢْ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﻛَﻔَﺮُﻭْﺍ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﻭَﺑِﺮَﺳُﻮْﻟِﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺄْﺗُﻮْﻥَ
ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﻫُﻢْ ﻛُﺴَﺎﻟَﻰ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﻨْﻔِﻘُﻮْﻥَ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﻫُﻢْ ﻛَﺎﺭِﻫُﻮْﻥَ -

তাদের (কাফিরদের) দান গ্রহণ করা নিষেধ করা হয়েছে এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে, ছালাতে শৈথিল্যের সাথে উপস্থিত হয় এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে দান করে’ (তওবা ৯/৫৪) ।

উপসংহার : পরিশেষে বলবো, কোন দালান যেমন
ভিত্তি স্থাপন করা ব্যতীত দাঁড় করানো সম্ভব নয়। তেমনি ভিত্তি ব্যতীত ইসলামের উপর টিকে থাকাও সম্ভব নয়, আর ইসলামের মৌলিক ভিত্তিই হ’ল আক্বীদা। মানুষ তার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সেই মৌলিক ভিত্তির উপরেই টিকে থাকবে। তার জীবনের সবকিছুকে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করবে।

✍ মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ

, ﻗُﻞْ ﺇِﻥَّ ﺻَﻠَﺎﺗِﻲْ ﻭَﻧُﺴُﻜِﻲْ ﻭَﻣَﺤْﻴَﺎﻱَ ﻭَﻣَﻤَﺎﺗِﻲْ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ
ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴْﻦَ - ﻟَﺎ ﺷَﺮِﻳْﻚَ ﻟَﻪُ ﻭَﺑِﺬَﻟِﻚَ ﺃُﻣِﺮْﺕُ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﻭَّﻝُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴْﻦَ - ‘
বল আমার ছালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও
আমার মরণ জগৎ সমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তাঁর কোন শরীক নাই এবং আমি এর জন্যই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম’ (আন‘আম
৬/১৬২-১৬৩) ।

অতএব দুনিয়াবী জীবনের সকল কর্মকান্ডে একমাত্র লক্ষ্য থাকবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জান্নাত লাভ করা। আর মানুষের কর্মকান্ডে আল্লাহ সন্তুষ্ট
হবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত তার আক্বীদা ছহীহ না হবে। সুতরাং সঠিক আক্বীদাই পরকালীন জীবনে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়।
আল্লাহ আমাদের ছহীহ আক্বীদা বুঝার এবং সে মতে চলার তাওফীক্ব দিন-আমীন!
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

বিশুদ্ধ আক্বিদা (১ম পর্ব)


----------------------------------------------

সুচনাঃ

আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে আশরাফুল মাখলূকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ পেশ করে আক্বীদা বা বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই।

ইহা এমন এক ভিত্তি, যাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার সার্বিক জীবন পরিচালনার গতিপথ নির্ধারণ করে। আক্বীদা বা বিশ্বাস যার বিশুদ্ধ নয় তার সম্পূর্ণ জীবনটাই বৃথা। কারণ মানব জীবনের মূল চাবিকাঠি হল তার আক্বীদা বা বিশ্বাস; যার আলোকে মানুষ তার সকল কর্ম সম্পাদন করে থাকে।

ইহা এমন এক অতুলনীয় শক্তি, যার উপর ভর করে নিজের জীবনটুকু বিলিয়ে দিতেও সে কুণ্ঠাবোধ করে না। ভিত্তি স্থাপন ব্যতীত কোন বিল্ডিং বানানো যেমন অসম্ভব, তেমনি বিশুদ্ধ আক্বীদা ব্যতীত নিজেকে মুসলিম দাবী করাও অসম্ভব।

প্রতিটি কথা ও কর্ম যদি বিশুদ্ধ আক্বীদা বা বিশ্বাস থেকে নির্গত না হয় তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না।

মানবজাতির যাবতীয় পথভ্রষ্টতার মূলে রয়েছে তার মৌলিক আক্বীদা থেকে বিচ্যুত হওয়া। তাই সঠিক

আক্বীদাই পরকালীন মুক্তির একমাত্র উপায়। অতএব বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে জানা অপরিহার্য।



❒ আক্বীদার পরিচয়ঃ

শাব্দিক অর্থ : ﻋﻘﻴﺪﺓ(আক্বীদা) শব্দটি আরবী ﻋﻘﺪﺓ (উক্বদাতুন) শব্দ থেকে উদ্গৃত। যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- গিরা বা বাঁধন। যেমন কুরআনে বর্ণিত হয়েছে ﻋُﻘْﺪَﺓُ ﺍﻟﻨِّﻜَﺎﺡِ অর্থাৎ "বিবাহের বাঁধন’ (বাক্বারাহ ২/২৩৭) ।

পারিভাষিক অর্থ : সাধারণভাবে সেই সুদৃঢ় বিশ্বাসকেই আক্বীদাহ বলা হয়; যার উপর ভিত্তি করে মানুষ তার জীবন পরিচালনা করে। আর ইসলামী আক্বীদা বলতে বুঝায়- আল্লাহর রুবূবিয়্যাত, উলুহিয়্যাত ও আসমা ওয়াছ ছিফাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। তাঁর

ফেরেশতামন্ডলী, নবী-রাসূলগণ, তাঁদের উপর

নাযিলকৃত কিতাব সমূহ, আখেরাত বা পরকাল

এবং তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপর সন্দেহ মুক্ত দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা।


❒ সঠিক আক্বীদা পোষণের গুরুত্বঃ

(ক) আক্বীদা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের প্রধান স্তম্ভঃ


আক্বীদা তথা আল্লাহর একত্বে পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের প্রথম স্তম্ভ।


✍ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন,



ﺑُﻨِﻰَ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡُ ﻋَﻠَﻰ ﺧَﻤْﺲٍ ﺷَﻬَﺎﺩَﺓِ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ

ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺇِﻗَﺎﻡِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻭَﺇِﻳْﺘَﺎﺀِ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓِ ﻭَﺍﻟْﺤَﺞِّ ﻭَﺻَﻮْﻡِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ

‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। ১. আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। ২. ছালাত ক্বায়েম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হজ্জ সম্পাদন করা এবং ৫. রামাযানের ছিয়াম পালন করা’।

অতএব ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার প্রধান মাধ্যম হ’ল, ছহীহ বা বিশুদ্ধ আক্বীদা, যা পরকালীন মুক্তির সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী হাতিয়ার।

(খ) বিশুদ্ধ আক্বীদাই কুরআন মানার মাধ্যমঃ

আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির জন্য ইসলামকে একমাত্র দ্বীন হিসাবে মনোনীত করে ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান অহী মারফত নাযিল করেছেন। মানুষ তার
সার্বিক জীবন কিভাবে পরিচালনা করবে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সম্পর্কে কেমন আক্বীদা পোষণ করবে? এর সবকিছুই কুরআনে যথাযথভাবে বর্ণিত হয়েছে।
কুরআনের এমন কোন সূরা নেই যেখানে তাওহীদ
সম্পর্কে আলোচনা করা হয়নি। তাই বলা যায়
যে, সম্পূর্ণ কুরআনই তাওহীদ। কেননা কুরআনের
সর্বত্রই আল্লাহর নামসমূহ ও গুণাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এবং আল্লাহর সাথে কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে শরীক করা থেকে বিরত থেকে এক আল্লাহর ইবাদত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। অথবা তাতে আল্লাহর একনিষ্ঠ তাওহীদপন্থী বান্দাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে উত্তম প্রতিদান দানের কথা বলা হয়েছে এবং তাঁর নাফরমান কাফির মুশরিকদের শাস্তির সংবাদ দেওয়া হয়েছে। অথবা তাতে পূর্ববর্তী নবীগণের একনিষ্ঠ অনুসারীদের উপর আল্লাহর সাহায্যের কথা বলা হয়েছে এবং নবীগণকে অস্বীকারকারীদের উপর আল্লাহর নাযিলকৃত গযবের কথা বলা হয়েছে। যেমন- পবিত্র কুরআনে নূহ (আঃ), হুদ (আঃ), ছালেহ (আঃ), ইবরাহীম (আঃ)-এর কওমের উপর আনীত সাহায্য ও শাস্তির কথা বিবৃত হয়েছে। অথবা তাতে হালাল ও হারামের কথা বলা হয়েছে, যা তাওহীদের হক সমূহের অন্তর্ভুক্ত। কেননা আল্লাহর তাওহীদপন্থী বান্দারা কুরআনে বর্ণিত হালালকে হালাল এবং হরামকে হারাম বলে বিশ্বাস করবে। হালাল উপার্জন করবে এবং হারাম উপর্জন থেকে যেকোন মূল্যে বিরত থাকবে। অতএব বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণের মাধ্যমেই পূর্ণরূপে কুরআন
মানা সম্ভব।

(গ) বিশুদ্ধ আক্বীদা ইসলামে প্রবেশের একমাত্র মাধ্যমঃ
আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির জন্য ইসলামকে একমাত্র দ্বীন হিসাবে মনোনীত করেছেন। এতদ্ভিন্ন কোন দ্বীন আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।

✍ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﺒْﺘَﻎِ ﻏَﻴْﺮَ ﺍﻟْﺈِﺳْﻼَﻡِ ﺩِﻳْﻨًﺎ ﻓَﻠَﻦْ ﻳُﻘْﺒَﻞَ
ﻣِﻨْﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻓِﻲْ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﺎﺳِﺮِﻳْﻦَ - ‘
যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন অন্বেষণ করবে তার থেকে তা কখনোই গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আলে-ইমরান ৩/৮৫) ।

আর ইসলামে প্রবেশের একমাত্র মাধ্যম হ’ল
আক্বীদা ছহীহ হওয়া। কারণ ইসলামের মৌলিক বিষয় হ’ল আক্বীদাহ। আক্বীদা বা বিশ্বাসই মানুষকে পথভ্রষ্ট করে এমনকি ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
যেমন –

আক্বীদাগত কারণে একজন মানুষ তার সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গিয়ে নিজ হাতে বানানো মূর্তির পূজা করে, তাকেই পরকালে নাজাতের অসীলা মনে করে, তার বিরুদ্ধে অবস্থানকারী নিজ সন্তান হ’লেও তাকে হত্যা করার মত ঘৃণিত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ইবরাহীম (আঃ) মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তাঁর পিতা কর্তৃক হত্যার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। আল্লাহর বিশেষ রহমতে আগুনের প্রচন্ড তাপ তাঁর জন্য শীতল ও আরামদায়ক হয়েছিল। অথচ ঐ সকল মূর্তি পরকালে তাদের কোনই উপকার
করতে পারবে না; বরং তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করবে।

✍ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

ﻭَﺍﺗَّﺨَﺬُﻭْﺍ ﻣِﻦْ ﺩُﻭْﻥِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺁﻟِﻬَﺔً ﻟِﻴَﻜُﻮْﻧُﻮْﺍ ﻟَﻬُﻢْ ﻋِﺰًّﺍ، ﻛَﻼَّ ﺳَﻴَﻜْﻔُﺮُﻭْﻥَ ﺑِﻌِﺒَﺎﺩَﺗِﻬِﻢْ ﻭَﻳَﻜُﻮْﻧُﻮْﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺿِﺪًّﺍ -
‘তারা আল্লাহ ব্যতীত বহু মা‘বূদ গ্রহণ করেছে, যাতে তারা তাদের সাহায্যকারী হ’তে পারে। কখনই নয়,
তারা তাদের ইবাদতের কথা অস্বীকার করবে এবং তাদের বিপক্ষে চলে যাবে’ (মারইয়াম ১৯/৮১-৮২)।

✍ তিনি অন্যত্র বলেনঃ

ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﻧَﺤْﺸُﺮُﻫُﻢْ ﺟَﻤِﻴْﻌًﺎ ﺛُﻢَّ ﻧَﻘُﻮْﻝُ ﻟِﻠَّﺬِﻳْﻦَ ﺃَﺷْﺮَﻛُﻮْﺍ ﻣَﻜَﺎﻧَﻜُﻢْ ﺃَﻧْﺘُﻢْ
ﻭَﺷُﺮَﻛَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻓَﺰَﻳَّﻠْﻨَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺷُﺮَﻛَﺎﺅُﻫُﻢْ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺇِﻳَّﺎﻧَﺎ ﺗَﻌْﺒُﺪُﻭْﻥَ -
ﻓَﻜَﻔَﻰ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺷَﻬِﻴْﺪًﺍ ﺑَﻴْﻨَﻨَﺎ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﺇِﻥْ ﻛُﻨَّﺎ ﻋَﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩَﺗِﻜُﻢْ ﻟَﻐَﺎﻓِﻠِﻴْﻦَ -
‘আর যেদিন আমি তাদের সকলকে একত্রিত
করব, অতঃপর যারা শিরক করেছে তাদেরকে বলব, তোমরা ও তোমাদের শরীকরা নিজ নিজ জায়গায়
দাঁড়িয়ে যাও। অতঃপর আমি তাদেরকে আলাদা করে দিব। তখন তাদের শরীকরা বলবে, তোমরা তো আমাদের ইবাদত করতে না। সুতরাং আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের মাঝে সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট। আমরা নিশ্চয়ই তোমাদের ইবাদত সম্পর্কে গাফেল ছিলাম (জানতাম না)’ (ইউনুস ১০/২৮-২৯) ।

✍ তিনি অন্যত্র আরও বলেনঃ
ﻭَﻗِﻴﻞَ
ﺍﺩْﻋُﻮْﺍ ﺷُﺮَﻛَﺎﺀَﻛُﻢْ ﻓَﺪَﻋَﻮْﻫُﻢْ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﺠِﻴْﺒُﻮْﺍ ﻟَﻬُﻢْ ﻭَﺭَﺃَﻭُﺍ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏَ ﻟَﻮْ
ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﻛَﺎﻧُﻮْﺍ ﻳَﻬْﺘَﺪُﻭْﻥَ -
‘আর বলা হবে, তোমরা তোমাদের দেবতাগুলোকে ডাক, অতঃপর তারা তাদেরকে ডাকবে, তখন তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে না। আর তারা আযাব প্রত্যক্ষ করবে। হায়! এরা যদি সৎপথ প্রাপ্ত হ’ত’ (কাছাছ ২৮/৬৪) ।

✍ তিনি অন্যত্র বলেনঃ

ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﻳَﻘُﻮْﻝُ ﻧَﺎﺩُﻭْﺍ ﺷُﺮَﻛَﺎﺋِﻲَ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺯَﻋَﻤْﺘُﻢْ ﻓَﺪَﻋَﻮْﻫُﻢْ ﻓَﻠَﻢْ
ﻳَﺴْﺘَﺠِﻴْﺒُﻮْﺍ ﻟَﻬُﻢْ ﻭَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﻣَﻮْﺑِﻘًﺎ - ﻭَﺭَﺃَﻯ ﺍﻟْﻤُﺠْﺮِﻣُﻮْﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ
ﻓَﻈَﻨُّﻮْﺍ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﻣُﻮَﺍﻗِﻌُﻮْﻫَﺎ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺠِﺪُﻭْﺍ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻣَﺼْﺮِﻓًﺎ -
‘আর যেদিন তিনি বলবেন, তোমরা ডাক আমার শরীকদের, যাদেরকে তোমরা (শরীক) মনে করতে। অতঃপর তারা তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে না। আমি তাদের মাঝে রেখে দিব ধ্বংসস্থল। আর অপরাধীরা আগুন দেখবে। অতঃপর
তারা নিশ্চিতরূপে জানতে পারবে যে, নিশ্চয়ই তারা তাতে নিপতিত হবে এবং তারা তা থেকে বাঁচার কোন পথ খুঁজে পাবে না’ (কাহাফ ১৮/৫২-৫৩) ।

✍ তিনি অন্যত্র বলেনঃ

ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺟِﺌْﺘُﻤُﻮْﻧَﺎ ﻓُﺮَﺍﺩَﻯ ﻛَﻤَﺎ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎﻛُﻢْ ﺃَﻭَّﻝَ ﻣَﺮَّﺓٍ ﻭَﺗَﺮَﻛْﺘُﻢْ ﻣَﺎ ﺧَﻮَّﻟْﻨَﺎﻛُﻢْ
ﻭَﺭَﺍﺀَ ﻇُﻬُﻮْﺭِﻛُﻢْ ﻭَﻣَﺎ ﻧَﺮَﻯ ﻣَﻌَﻜُﻢْ ﺷُﻔَﻌَﺎﺀَﻛُﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺯَﻋَﻤْﺘُﻢْ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ
ﻓِﻴْﻜُﻢْ ﺷُﺮَﻛَﺎﺀُ ﻟَﻘَﺪْ ﺗَﻘَﻄَّﻊَ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺿَﻞَّ ﻋَﻨْﻜُﻢْ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗَﺰْﻋُﻤُﻮْﻥَ -
‘আর নিশ্চয়ই তোমরা আমার কাছে নিঃসঙ্গ হয়ে এসেছ, যেরূপ আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম এবং আমি তোমাদেরকে যা দান করেছিলাম, তা তোমরা ছেড়ে এসেছ তোমাদের পিঠের পেছনে। আর আমি তোমাদের সাথে তোমাদের সুপারিশকারীদের দেখছি না, যাদেরকে তোমরা মনে করেছিলে যে, নিশ্চয়ই তারা তোমাদের মধ্যে (আল্লাহর) অংশীদার। অবশ্যই ছিন্ন হয়ে গেছে তোমাদের পরষ্পরের সম্পর্ক। আর তোমরা যা ধারণা করতে, তা তোমাদের হ’তে হারিয়ে গেছে’ (আন‘আম ৬/৯৪) ।

✍ তিনি অন্যত্র বলেনঃ

ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﻭَﻣَﺎ ﺗَﻌْﺒُﺪُﻭْﻥَ ﻣِﻦْ ﺩُﻭْﻥِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺣَﺼَﺐُ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻟَﻬَﺎ ﻭَﺍﺭِﺩُﻭْﻥَ،
ﻟَﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﻫَﺆُﻻَﺀِ ﺁﻟِﻬَﺔً ﻣَﺎ ﻭَﺭَﺩُﻭْﻫَﺎ ﻭَﻛُﻞٌّ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﺧَﺎﻟِﺪُﻭْﻥَ
‘তোমরা এবং আল্লাহ তা‘আলার পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর সেগুলি তো জাহান্নামের ইন্ধন,
তোমরা সকলেই এতে প্রবেশ করবে। যদি এরা ইলাহ হ’ত তাহ’লে এরা জাহান্নামে প্রবেশ করত না, তাদের সকলেই এতে স্থায়ী হবে’ (আম্বিয়া ২১/৯৮-৯৯) ।
(চলবে)
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬